ষ্টার্ফ রির্পোটারঃ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ওষুধ, তেমনি জীবন ধারণের জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, । এজন্য তা গুণগত মানসম্পন্ন ও নির্ভেজাল হওয়ার বিকল্প নেই। দেশের মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের এ দায়িত্ববোধ থেকেই খাদ্য এবং ওষুধের গুণগতমান ও নির্ভেজালত্ব করার তাগিদে কাজ করছে বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ঔষধ প্রশাসন।
তবে সরকারের কঠোর নির্দেশনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি সত্ত্বেও বাজারে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করাই যাচ্ছে না। খাবারের পাশাপাশি বাজারে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ছড়াছড়ি। পাশাপাশি রয়েছে নকল ও নিম্নমানের ওষুধ। কিছু ছোট কোম্পানির বিরুদ্ধে নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির প্রমাণ মিললেও স্বনামধন্য কোম্পানি সম্পর্কে ক্রেতারা উচ্চ ধারণা পোষণ করে আসছিলেন এতদিন; কিন্তু ওসব কোম্পানির ওষুধও যে নির্ভেজাল, বাস্তবে বহু ক্ষেত্রেই তার প্রমাণ মিলছে না।
ওষুধ এমন একটি পণ্য, যার সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন সরাসরি যুক্ত। এর গুণ ও মানগত যেকোনো ব্যত্যয় মানুষের জীবন বাচাবার বদলে জীবন সংহারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন মানুষকে হত্যা করার পর্যায়েই পড়ে। এমন অপরাধ যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধানই কাম্য।
তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানিও করে। নিম্নমানের কাঁচামালে তৈরি ওষুধ রপ্তানি করলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হবে, যা ওষুধশিল্পের ভবিষ্যৎকে হুমকিতে ফেলবে। কিছু কোম্পানির কারণে দেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশ যেন বিপন্ন না হয়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বাস্তবতা বলছে, কিছু কোম্পানি অতিমুনাফার লোভে নিম্নমানের অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) আমদানি করছে বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠছে। এটি শতভাগ বন্ধ করতে তদারকি আরো জোরদার করতে হবে। কাঁচামাল আমদানির আগে সংশ্লিষ্ট এপিআই উৎপাদনকারী কোম্পানির যাবতীয় বিষয় দেখে অনুমতি দিতে হবে। শুধু স্বল্প মূল্যে এপিআই পাওয়া গেলেই তা আমদানি করতে হবে এমন মনোভাব পরিহার করা এখন সময়ের প্রয়োজনেই জরুরি।
আশার কথা হলো, জীবনরক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল রুখতে কঠোর মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বাজারে বিদ্যমান নকল, ভেজাল, নিম্নমান ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রতিরোধে সারাদেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অধিদপ্তরের উদ্যোগে চলছে দেশব্যাপী ফার্মেসি পরিদর্শন, আনরেজিস্টার্ড, মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, ভেজাল ওষুধ জব্দকরণ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। অধিদপ্তরের এমন কঠোর মনোভাবের কারণে এরই মধ্যে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফার্মেসি থেকে ফেরত নিতে শুরু করেছে তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। ফেরত নেয়া ওষুধগুলো স্থানীয় ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের উপস্থিতিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে রিপোর্ট প্রেরণ করা হচ্ছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে।
জানা যায়, চলমান এ অভিযানে সাড়ে ৩৬ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করেছে ১৫৮টি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সাড়ে ৪ হাজার ফার্মেসি পরিদর্শন করে ১৫২টি মামলা করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। পাশাপাশি ১ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এদিকে হাইকোর্ট এক আদেশে দেশের ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকলে তা জব্দ করে ১ মাসের মধ্যে ধ্বংস করার এবং এ ধরনের ওষুধ বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আদালতের নির্দেশনার তথ্য প্রাপ্তির সাথে সাথেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দ্রুততার সাথে কার্যক্রম শুরু করে।
কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১৯ জুন সকল ওষুধ উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সকল ফার্মেসি হতে ৭ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। একই সময়ে ভিন্ন আদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৭ দিনের মধ্যে ফেরত দেবার জন্য বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতিকেও নির্দেশনা প্রদান করে।
এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত ২৩ জুন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সকল ফার্মেসি হতে উত্তোলন ও ধ্বংসকরণ বিষয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফার্মেসি হতে ফেরত নিয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। ফেরত নেয়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো স্থানীয় ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের উপস্থিতিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে রিপোর্ট প্রেরণ করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে।
উল্লেখ্য, ১৫৮টি প্রতিষ্ঠান (উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক) ২ কোটি ৩১ লাখ ৪ হাজার ৬৭২ ইউনিট ওষুধ ফার্মেসি হতে ফেরত নিয়েছে এবং ধ্বংস করেছে, যার আনুমানিক মূল্য ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৭ টাকা।